Humanity Research Consultancy

সার্ভাইভার নেটওয়ার্ক ক্ষমতায়ন এবং উচ্চতর বোঝাপড়ার উদ্দেশ্যে এইচআরসি, উইনরক ইন্টারন্যাশনাল ও অনির্বাণের সম্মিলিত গবেষণা প্রকল্প

calendar [#293757] Created with Sketch.

September 19, 2023

Projects

এইচআরসি এবং উইনরক ইন্টারন্যাশনাল (ইউএসএইড এশিয়া সিটিআইপি দ্বারা অর্থায়িত) সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি সারভাইভার-নেতৃত্বাধীন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, মানব পাচারের শিকারদের একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে কর্মরত অনির্বাণ-এর সাথে অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণা চালিয়েছে।


উইনরক ইন্টারন্যাশনাল ও ইউএসএইডের সহায়তায় ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত অনির্বাণ মানবপাচার ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে, এবং একইসাথে ভিকটিমদের নিরাপদ অভিবাসন ও সার্ভাইভারদের তাদের সমাজে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। মানবপাচার রোধ করতে, সার্ভাইভারদের ক্ষমতায়নে এবং সমাজে তাদের পুনর্বাসন সহজ করতে যেসব জটিল চ্যালেঞ্জের, এবং সুযোগের সম্মূখীন হতে হয় সেসবের সাথে অনির্বাণের ন্যায় সংগঠনগুলোর নিবিড় পরিচয় রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে কাউন্টার ট্রাফিকিং-এ কখনো কখনো তারাই হয়ে ওঠে নিকটস্থ সবচেয়ে কার্যকর এজেন্ট।


অনির্বাণ-এর যশোর ও কক্সবাজার শাখার সাথে এইচআরসি, উইনরক ইন্টারন্যাশনাল এবং অনির্বাণ একটি সম্মিলিত গবেষণা প্রকল্পের সূচনা করে। উদ্দেশ্য ছিল সার্ভাইভার গ্রুপগুলোর চলন প্রক্রিয়া ও অনুশীলন অভ্যাস বিষয়ে আমাদের সমন্বিত বোঝাপড়ার উন্নতিসাধন, যা সর্বোপরি এই সিস্টেমকে শেকড় থেকে পরিবর্তনে অবদান রাখে। সহযোগিতা এবং ক্ষমতায়নকে প্রাধান্য দিয়ে এই প্রজেক্টের জন্য একটি ‘অংশগ্রহনমূলক কর্ম গবেষণা’(participatory action research – PAR) কাঠামো নির্বাচন করা হয়েছে।

 

PAR একটি গবেষণা পদ্ধতি যা কোনো সমাজে কোনো কমিউনিটি বা গোষ্ঠীর সাথে সম্পন্ন হয়, কোনো গোষ্ঠীর উপর নয়। যা চিরাচরিত গবেষণা পদ্ধতিকে পুরো পালটে দেয়; যেহেতু এটি দাবি করে গবেষণার সকল স্তরে সংশ্লিষ্ট সকলের উৎপাদনশীলতা এবং অভিযোজনক্ষমতা। মৌলিকভাবে, PAR স্বীকার করে যে অংশগ্রহনকারীদের রয়েছে তাদের পরিস্থিতি বিষয়ে কিছু অনন্য ও মূল্যবান জ্ঞান, এবং পরিবর্তনের পথে সকল কিছুর সমাধান। অংশগ্রহনকারীরা এই গবেষণায় উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে সক্ষম, এমনকি এই পুরো যাত্রায় তাদের অংশগ্রহন সঠিক ও কার্যকর পরিবর্তন ঘটাতে খুবই প্রয়োজনীয়। এই পারস্পরিক শিখন পদ্ধতির ফলে সবগুলো পক্ষই বুঝতে সক্ষম হয়েছে অনির্বাণের সাথে তাদের সমাজের সংগঠনগুলোর সম্পর্ক।


PAR প্রোগ্রাম শুরু হয় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। উইনরক ইন্টারন্যাশনাল হতে মিশাইল টউসন ও ক্যাটেরিনা গ্রাসো এবং এইচআরসি’র এরিক ক্যাসপার ও আব্দুস সালাম একত্রে অনির্বাণের কক্সবাজার ও যশোর শাখাকে সাথে নিয়ে গবেষণা চালান।

অনির্বাণ-এর মত গোষ্ঠী, যারা সিস্টেমেটিক পরিবর্তন তৈরিতে কাজ করে, তাদের শক্তির ভিত্তি হচ্ছে তাদের অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃস্থ সম্পর্কগুলো, যা শক্তিশালী কর্মগোষ্ঠীর বৃহত্তর নেটওয়ার্কের মাঝে তাদের অবস্থানের সাথে সম্পর্কিত। যশোরে কাউন্টার-হিউম্যান ট্রাফিকিং এবং সার্ভাইভার পুনর্বাসন অ্যাডভোকেসিতে নিযুক্ত অংশীদারদের পাওয়ার/নেটওয়ার্ক ম্যাপিং সম্পাদনের মাধ্যমে আমরা যশোর অনির্বাণ এবং অন্যান্য স্থানীয় সংগঠনগুলোর মধ্যে সম্পর্ক এবং তা শক্তিশালীকরণ বিষয়ে একটি বোঝাপড়ায় উপনীত হয়েছি।

 

অনির্বাণ আমাদের আমন্ত্রণ জানায় তাদের কমিউনিটি পার্টনারদের পরিদর্শনের; যারা অবদান রেখেছে সার্ভাইভার পুনর্বাসন এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে, যার মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক, রাইটস যশোর এবং নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়। দুইজন স্থানীয় আইনজীবী, যারা অনির্বাণের সাথে কাজ করেন, তাঁরা আলোকপাত করেন পাচারের কেসগুলোতে কীভাবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ কাজ করে তার উপর। একইসাথে তাঁরা যেভাবে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে সার্ভাইভারদের সহযোগিতা করেন তার বর্ণনা দেন।

 

একইসাথে অনির্বাণ সম্পর্ক অন্বেষণরত এইচআরসি ও উইনরক ইন্টারন্যাশনালের সাথে সংগঠনগুলোর পরিচয় করিয়ে দেয়। আমরা গিয়েছি এফপিআইবি হসপিটালে, যেখানে যশোর অনির্বাণ আয়োজন করছে মানবপাচার সার্ভাইভারদের বিনামূল্যে চিকিৎসা। আমরা বাসা এন্টারপ্রাইজের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, যারা অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর নারীদের দ্বারা  হাতে তৈরি চাদর উৎপাদন করে। যেহেতু অনির্বাণ নিজেদেরকে একটি স্বনির্ভর সামাজিক উদ্যোগতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, আমরা অনির্বাণকে সাহায্য করতে বাসা’র এগিয়ে আসার সম্ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়েছি, যাতে কমিউনিটিতে সার্ভাইভার নারী এবং অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর নারীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যায়।


২০২৩ সালের জুলাইয়ে উইনরক ইন্টারন্যাশনালের জন লুকের সালামের সাথে যোগদান করেন। আমরা অনির্বাণ সদস্যদের নিয়ে PAR কর্মশালার আয়োজন করি, যেখানে আমরা তাদের সক্রিয় অংশীদার হিসেবে নিযুক্ত করি গবেষণা প্রশ্ন তৈরি, গবেষণার ধারা পরিকল্পনা এবং প্রাপ্ত ফলাফল ব্যাখ্যা করার জন্য। সালাম এবং জন লুক পেশাদার ডকুমেন্টেশনের কৌশল প্রদর্শন করেন, যেখানে ছিল উচ্চ-মানের প্রতিবেদনের উদাহরণ, সাংগঠনিক প্রভাবের গল্প লেখার সাধারণ অভ্যাস এবং পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য সূচক এবং লগ ফ্রেম ব্যবহার করার পদ্ধতি। এই কর্মশালার লক্ষ্য ছিল সার্ভাইভারদের ক্ষমতায়ন করা, পারস্পরিক শিক্ষাকে উৎসাহিত করা এবং মানবপাচারকেন্দ্রীক সামাজিক সমস্যাগুলি মোকাবেলার জন্য কার্যকর জ্ঞান উৎপাদন করা।


PAR কর্মশালা সেশন

আবদুস সালাম, এইচআরসির সার্ভাইভার এমপাওয়ারমেন্ট অফিসার, এই প্রকল্পের উপর প্রতিফলন করেছেন:

আমরা যখন এই PAR প্রজেক্ট শুরু করি, PAR সম্বন্ধে বা সার্ভাইভারপরিচালিত সংগঠনগুলো কীভাবে কাজ করে সে সম্বন্ধে আমার কোনো ধারণা ছিল না। অনির্বাণের সাথে কাজ করে বারংবার চমৎকৃত হয়েছি। তারা একদা তাদের কমিউনিটিতে খুবই ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল, এবং তাদের কমিউনিটি পাচারের অভিজ্ঞতার পর তাদেরকে গ্রহন করতে ইচ্ছুক ছিল না। কিন্তু তারা তাদের ভঙ্গুর অবস্থা জয় করেছে এবং তারা তাদের জীবনে পুনর্বাসন করেছে এবং পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পেরেছে।

 

মানবপাচার প্রতিহত করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা তাদের ক্ষমতায়ন করে চলেছি এমইএল ট্রেনিং, রিপোর্ট লেখা এবং ইম্প্যাক্ট স্টোরি লেখার প্রশিক্ষণ দেবার মাধ্যমে। আমি মনে করি আমরা এখানে সফল। আমি অনির্বাণ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমি অন্যান্য সার্ভাইভারদের সাথে কাজ করতে শিখেছি যারা ট্রমাঅবহিত। আমি তাদের সাথে কাজ করতে পেরে কৃতজ্ঞ।

 

একজন অনির্বান সদস্য কর্মশালার সময় নিম্নোক্ত ভাবনা পেশ করেন:

“M&E অথবা MEL, ফাইন্যান্স, থিওরি অফ চেঞ্জ, বাজেট, ইন্ডিকেটর, রিপোর্টিং বিষয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র কোনো ধারণা ছিল না। কর্মশালার মাধ্যমে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি, অনেক ভালো ভালো ধারণা পেয়েছি। এই কর্মশালা কার্যক্রম সংগঠিত ও পরিচালনা করতে অনেক সহযোগী ভূমিকা পালন করবে। অনির্বান এই প্রজেক্ট হতে উদ্ভুত সকল সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে আগ্রহী। এইচআরসি, উইনরক এবং এশিয়া সিটিআইপিকে ধন্যবাদ।

 

এইচআরসি ও উইনরক ইন্টারন্যাশনাল বর্তমানে এই প্রকল্পের উপর একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে। অনির্বাণের পরামর্শকগণ তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং ফল প্রকাশে সহযোগিতা করছেন। এই প্রতিবেদনটি সিস্টেমিক অবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ প্রদান করবে যা নেটওয়ার্ক তৈরি ও সার্ভাইভার-পরিচালিত সংগঠনকে সফল করবে। এই প্রকল্পজুড়ে সংগ্রহিত তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের বিশ্লেষণ অনির্বাণের সামাজিক নেটওয়ার্কের উপর প্রতিফলন করবে, যা তাদের কমিউনিটিতে এবং কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের কার্যক্রমকে সচল রাখতে তাদের সাংগঠিক চর্চার নানান পন্থার উপর দৃষ্টিপাত করবে। আমরা একইসাথে পুনঃএকত্রীকরণ/পুনর্বাসন সহায়তার একটি অর্থনৈতিক মূল্যায়ন তৈরি করব, যার লক্ষ্য সার্ভাইভারদের পুনর্বাসন নিশ্চিত না করা হলে সেটির (বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যান্যদের) খরচ অনুমান করা।


অনির্বাণ সার্ভাইভার-সংগঠকদের সাথে সহ-পরিকল্পিত এবং সহ-সুবিধাপূর্ণ এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই সহযোগী গবেষণা এবং প্রকল্প কার্যক্রমের সম্ভাব্যতা প্রদর্শনে দুর্দান্তভাবে সফল হয়েছে যা সার্ভাইভার-পরিচালিত সংগঠনগুলিকে সহযোগিতা করতে পারে। অনির্বাণের সাথে কাজের সুযোগ তৈরি করে দেয়ার জন্য এবং তাদের ক্রমবর্ধমান নেটওয়ার্কের অংশ হতে পেরে আমরা অনির্বাণের কাছে কৃতজ্ঞ । আমরা এই সম্পর্কের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের প্রতিষ্ঠা করতে সহযোগী হবার প্রত্যাশা করি। সকলকে সঙ্গে নিয়ে, আমরা বিশ্বাস করি এই প্রকল্পটি সার্ভাইভার-সাংগঠনিক অভ্যাসের এবং সার্ভাইভার-পরিচালিত সংগঠনগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্থান প্রদান করবে, যা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মানবপাচারবিরোধী কর্মযজ্ঞে মূল্যবান ও অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা রাখবে।


অনির্বাণের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের আনন্দঘন মুহূর্তে আমাদের টিমের সৌভাগ্য হয়েছিল তাদের মাঝে উপস্থিত থাকার, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানের বিষয়। (ছবি)

অনির্বাণ যশোর এবং অনির্বাণের সাথে যোগাযোগ করতে,  নীচে দেয়া তাদের সামাজিক মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি অনুসরণ করার জন্য আমরা আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।


ANIRBAN Jashore:https://www.facebook.com/profile.php?id=100063504195409


ANIRBAN Cox’s Bazar: https://www.facebook.com/anirban.coxsbazar/


নির্বাণ যশোর এবং অনির্বাণ কক্সবাজারের নেতৃবৃন্দ এই ব্লগের বিষয়বস্তুতে  সম্মতি দিয়েছেন, এবং সমস্ত অনির্বাণ সদস্যরা এই ব্লগে ছবি প্রকাশ করার জন্য আমাদের সম্মতি দিয়েছেন।